ক্লাসের শুরুতেই খুশি আপা সবার খোঁজ-খবর নিলেন। তারপর বললেন, চলো আজও কিছু ছবি নিয়ে কাজ শুরু করি। এসো সবাই মিলে নিচের ছবিগুলো দেখি এবং বোঝার চেষ্টা করি।
এখানে নিচের জিনিসগুলোর ছবি হবে
সবার ছবি দেখা শেষ হলে খুশি আপা বললেন, এবার বলো উপরের এই ছবিগুলোকে একসঙ্গে আমরা কি বলতে পারি?
অন্বেষা: ছবিতে দেখানো মানুষ আর অন্য সবই আমাদের কোন না কোন ভাবে কাজে লাগেনা!
আনুই: এই মানুষগুলোর শ্রম, অন্যান উপকরণ এবং বাকী জিনিসগুলো ব্যবহার করে আমরা অনেক কিছু বানাতে পারি।
দীপঙ্কর: এগুলো ব্যবহার করে আমরা অনেক সেবা পেয়ে থাকি।
খুশি আপা বললেন, বাহ্ । তোমরা দেখি এদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোই বলে দিলে। ঠিকই বলেছ তোমরা। এদের সবারই এই বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে। আর এজন্যই এদেরকে এক কথায় আমরা সম্পদ বলে থাকি। আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছুই দেখি না কেন, সবই আমাদের সম্পদ। কেননা,
কোনো জিনিস তৈরি করতে বা কোনো সেবা দেওয়ার জন্য যা কিছুই মানুষ ও প্রকৃতির কাজে লাগে তা-ই সম্পদ। |
---|
এবার চলো, আমরা দলে বিভক্ত হয়ে উপরের ছবিগুলোকে ধরন অনুযায়ী আলাদা করে নিচের টেবিলের তিনটি কলামে বিভক্ত করি।
তারপর সবাই যার যার দলে বিভক্ত হয়ে উপরের ছবিগুলো থেকে একই ধরনের সম্পদগুলো আলাদা আলাদা কলামে নতুন করে সাজালো। সবগুলো দল উপস্থাপনা করার পর, সবার সাজানো একসঙ্গে মিলিয়ে নিচের টেবিলের মতো চেহারা দাঁড়াল।
পানি
| কৃষক | হাতুড়ি |
হাতুড়ি
| পাথর | কয়লা |
প্রাকৃতিক গ্যাস
| শিক্ষক | যাত্রীবাহী বাস |
খুশি আপা খুব খুশি হলেন সবার কাজ দেখে। বললেন, খেয়াল করে দেখ আমরা ছবির সম্পদগুলোকে তিনটি ধরণ অনুযায়ী তিনটি ভাগেই ভাগ করতে পেরেছি। প্রথম কলামে আমরা পেয়েছি পানি, সূর্যের আলো, গাছপালা, কয়লা ও স্বর্ণ। কেউ কি বলতে পারো, এদের মাঝে মিলের জায়গাটি কোথায়?
অন্নেষা বলল কারণ, এগুলো সবই সরাসরি প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায়, কোন মানুষই এগুলো তৈরি করে নি।
যে সম্পদ কোনো মানুষ তৈরি করে না বরং সরাসরি প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায় তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন-পানি, বাতাস, সূর্যের আলো, তামা, লোহা প্রভৃতি। |
---|
আচ্ছা তোমরা কী আরো কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের নাম বলতে পারো? তখন সবাই চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উদাহরণ খুঁজে বের করলো।
চলো আমরাও ওদের মতো করে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের উদাহরণ খুঁজে বের করি!! এবং নিচের ছকটি পূরণ করি
ক্রম | নাম | কোথায় পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | ||
২ | ||
৩ |
মিলি বলল, দ্বিতীয় কলামে আমরা পেয়েছি, কৃষক, বাবুর্চি এবং শিক্ষক। এরা সকলেই মানুষ। সমাজের মানুষকে কোনো না কোনো সেবা দিয়ে থাকেন। তাই এরা সবাই একই কলামে স্থান পেয়েছেন। এরা সবাই মানবসম্পদের অন্তর্ভুক্ত।
সাধারণত যারা বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি বা উৎপাদন করে বা সেবা প্রদান করে তারা মানব সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। |
---|
ক্রম | মানব সম্পদের নাম | কী সেবা পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | ||
২ | ||
৩ |
সুভাষ এবার তৃতীয় কলামের কথা বলতে গিয়ে দেখালো যে সেখানে জায়গা পেয়েছে হাতুড়ি, ট্রাকটর আর যাত্রীবাহী বাস। বললো যে, এগুলো মানুষ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে বা সেবা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
খুশি আপা বললেন এ ধরণের সম্পদকে সাধারণত রূপান্তরিত সম্পদ বলা হয়। তাহলে এবার রূপান্তরিত সম্পদের আরো কিছু উদাহরণ আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। সবাই মিলে রূপান্তরিত সম্পদের আরো কিছু উদাহরণ গুরা বের করলো।
সাধারণত মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে, জিনিস তৈরিতে ও সেবা প্রদান করার জন্য যে সকল জিনিস/দ্রব্য, যন্ত্রপাতি বা হাতিয়ার ব্যবহার করে, তাদের রূপান্তরিত সম্পদ বলা হয়। |
---|
রূপান্তরিত সম্পদের উদাহরণ খুজে বের করি ও নিচের সারণি পূরণ করি।
ক্রম | রূপান্তরিত মানব সম্পদের নাম: | কী সেবা পাওয়া যায় |
---|---|---|
১ | ||
২ | ||
৩ |
এরপর ওরা মজার একটি খেলা খেলল। খুশি আপা আগে থেকেই তৈরি করা একটি তালিকা বের করে বললেন এই তালিকাটিতে ২০টি সম্পদের নাম আছে। তোমরা প্রথমে একেকটি দলে ছয় জন করে ভাগ হয়ে যাও। সবাই উত্তেজনার সঙ্গে নিয়ম মেনে দলে বিভক্ত হয়ে গেল। তখন খুশি আপা বললেন, আগে খেলার নিয়মগুলো সবাই ভালো করে শোনো।
প্রাকৃতিক সম্পদ | রূপান্তরিত সম্পদ | মানব সম্পদ | প্রাপ্ত নম্বর |
---|---|---|---|
মোট= |
তারপর খুশি আপা বললেন, আচ্ছা চলো প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকাটা আবার দেখি। আচ্ছা বলোতো, এই তালিকায় সব প্রাকৃতিক সম্পদই কি একই রকম ? না তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য আছে?
সবাই চুপ!
খুশি আপা বললেন, আচ্ছা তোমাদের আরও একটু চিন্তার খোরাক দিচ্ছি। ভেবে দেখ তো ব্যবহার করার পর এগুলোর সবই কি একই পরিণতি লাভ করে? নাকি একেকটির পরিণীতি একেক রকম?
সবার আগে নন্দিনী হাত তুলে বলল, আমি জানি, পার্থক্য আছে। যেমন, পানি, বাতাস, সূর্যের আলো এরকম প্রাকৃতিক সম্পদগুলো ব্যবহার করলেও শেষ হয় না। প্রকৃতি আবার এগুলো তৈরি করে। কিন্তু কয়লা, লোহা, স্বর্ণ, জ্বালানি তেল এগুলো একবার ব্যবহার করলে চিরতরে শেষ হয়ে যায়। প্রকৃতি আর তাদের ফিরিয়ে আনে না।
খুশি আপা বললেন, একদম ঠিক বলেছ। পৃথিবীর সকল প্রাকৃতিক সম্পদকেই আসলে এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যে সম্পদগুলো বহু ব্যবহার করলেও শেষ হয় না বা কোনো একজন ব্যবহারকারী মানুষের জীবদ্দশাতেই প্রকৃতি আবার তাদের তৈরি করে, এগুলোর পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে, সেগুলোকে বলে নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। যেমন বাতাস, সূর্যের আলো প্রভৃতি। |
---|
তারপর বললেন, এখন খুব সহজেই তোমরা অনুমান করতে পারছ যে,
অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যেগুলো একবার ব্যবহার করলে চিরতরে ফুরিয়ে যায়, প্রকৃতি সাধারণত | আবার তাদের তৈরি করতে পারে না, সেসব প্রাকৃতিক সম্পদকে অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ বলে । যেমন: কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, জ্বালানি তেল, স্বর্ণ, তামা প্রভৃতি। |
---|
তবে একটা বিষয় আমরা মনে রাখবো-
কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যা সাধারণভাবে দেখলে মনে হতে পারে নবায়ণযোগ্য কিন্তু আসলে নবায়নযোগ্য নয়। কারণ একবার ব্যবহারের পর প্রকৃতি আর তা তৈরি করতে পারে না। তবে মাটির নীচে যে পানির মজুদ আছে তা পুনরায় মজুদ করতে পারলেও একজন মানুষের জীবদ্দশাতেই আগের অবস্থায় | ফিরে আসে না। নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যদি এমন মাত্রায় ব্যবহার করা হয় যে তা পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অনেক দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয় তখন ঐ প্রাকৃতিক সম্পদ অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক | সম্পদে পরিণত হয়। যেমন- পানি গাছপালা ইত্যাদি। |
---|
খুশি আপা, আচ্ছা তাহলে এখন আমরা সবাই জানলাম যে, আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, যা কিছু আমরা ব্যবহার করি, তার সবই আমাদের সম্পদ হয় প্রাকৃতিক, না হয় রূপান্তরিত অথবা মানব সম্পদ, না হয় সম্পদ ব্যবহার করে এসব তৈরি করা।
বাজার, দ্রব্য, পণ্য
এবার বলত। তোমাদের মাঝে কে কে বাজারে গিয়েছো?
দেখা গেল ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেমেয়েই কোনো না কোনো সময় বাজারে গিয়েছে। খুশি আপা বললেন, খুব ভালো! আর যাদের এখনো বাজারে যাওয়া হয়ে ওঠেনি, তারা অবশ্যই পরিবারের কারও সঙ্গে বাজারে ঘুরে আসবে। আচ্ছা, এবার বলো তো, বাজারে বা দোকানে কী হয়?
নিসর্গ বলল, অনেক জিনিস সাজানো থাকে বিক্রির জন্য। আর মানুষ বা ক্রেতারা এসে টাকার বিনিময়ে সেসব জিনিস কিনে নিয়ে যায়।
খুশি আপা, ভালো বলেছো। তাহলে এবার বলো তো সশরীর বাজারে যাওয়া ছাড়াই বাড়িতে বসে থেকেই কি কোথাও থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনতে পাওয়া যায়? অদেয়া বলল, যায় বৈকি। এই তো সেদিন আমার কাকা অনলাইনে ঘরে বসেই শার্ট কিনল।
ঠিকই বলেছ, তাহলে জিনিস কেনাবেচার জন্য বা বাজারে জন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয় না।
জায়গা ছাড়াও ক্রেতা থাকলেই যে কোন জায়গা থেকে কেনাবেচা হতে পারে। এ জন্যই অর্থনীতির ভাষায়-
কোন স্থানে কোন জিনিস কেনার মতো টাকা আছে এমন ক্রেতার সংখ্যাকে ঐ স্থানে ঐ জিনিসের বাজার বলে। |
---|
আচ্ছা এই সুযোগে তোমাদের মজার একটা বিষয় জানিয়ে রাখি।
বাজারে যেসব জিনিস বা দ্রব্য বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়, তাকে বলা হয় পণ্য। কাজেই আমরা বাজারে, দোকানে, অনলাইনে যেখানেই হোক না কেন, বিক্রির জন্য যেসব জিনিস বা দ্ৰব্য দেখি, তা-ই পণ্য। আর মানুষ যখন কোনো কিছু নিজে ব্যবহার করার জন্য উৎপাদন করে তাকে দ্রব্য বলে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে। ধরো একজন কৃষক যখন নিজে খাওয়ার জন্য চাল উৎপাদন করে, তখন সেই চাল একটি দ্রব্য। কিন্তু কৃষক যখন বিক্রির উদ্দেশ্যে চাল উৎপাদন করে বা তার উৎপাদিত চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়, তখন তাকে পণ্য বলে।
অন্যদিকে, মানুষ যখন অন্য মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজ করে দেয়, তখন সেসব কাজকে সেবা বলা হয়। সেখা অর্থের বিনিময়েও হতে পারে। মা যখন ঘরে আমাদের খাবার তৈরির জন্য রান্না করেন, সেটা একটি সেবা। কিন্তু রেস্টুরেন্টে যখন বাবুর্চি খাবার তৈরি করার জন্য রান্না করেন সেটা সেবা হলেও তিনি অর্থের বিনিময়ে সেবা বিক্রি করেন। এখানে সবাই একটা বিষয় খেয়াল করো, মা সারা দিনে যেসব কাজ করেন, তার সবই সেবা। কিন্তু তিনি আমাদের কাছ থেকে এসব সেবার জন্য কোনো অর্থ বা টাকা গ্রহণ করেন না। কারণ, তিনি আমাদের ভালোবাসেন। তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ প্রতিদিন আমাদের মায়েরা যেসব সেবা দিয়ে থাকেন, তা যদি অর্থমূল্যে রূপান্তর করা হয় তাহলে টাকার পরিমাণ কী হতে পারে?
এবার খুশি আপা একটু থেমে বললেন, এখন বলো তো যে পোশাক পরে এসেছ সেটা কি দ্রব্য না পণ্য?
আনাই মোগিনী সবার আগে হাত তুলে বলল, আমাদের পোশাক একটি দ্রব্য। কারণ আমরা এগুলো বিভিন্ন করছি না, নিজেরা ব্যবহার করছি। কিন্তু আমরা এগুলো কেনার সময় এগুলো যখন দোকানে ছিল, তখন এগুলো পণ্য ছিল।
খুশি আপা ভীষণ আনন্দিত হয়ে বললেন, খুব সুন্দর হয়েছে তোমার উত্তর। এরপর সবাই খুশি আপার সঙ্গে চারপাশের বিভিন্ন জিনিস থেকে কিছু জিনিস বাছাই করে তার মধ্যে কোনটি দ্রব্য, কোনটি সেবা আর কোনটি পণ্য তা আলাদা করে শনাক্ত করার খেলা খেলল।
চলো আমরাও নিচের সারণি ব্যবহার করে চারপাশের বিভিন্ন জিনিসের তালিকা তৈরি করে সেগুলোর মধ্যে। থেকে উপযুক্ত ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে কোনটি সেবা, কোনটি পণ্য আর কোনটি দ্রব্য তা আলাদা করি।
ক্রম | জিনিসের নাম | দ্রব্য | পণ্য | সেবা |
---|---|---|---|---|
১ | ||||
২ | ||||
৩ | ||||
৪ | ||||
৫ | ||||
৬ | ||||
৭ | ||||
৮ |
এরপর খুশি আপা বললেন, আচ্ছা এবার চলো আমরা আরেকটি কাজ করি। চলো আমরা আবারো দলে বসে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত কী কী দ্রব্য ও পণ্য ব্যবহার করি এবং এগুলো কোথায় তৈরি হয় তার একটা আনুমানিক তালিকা তৈরি করি। তখন সবাই নিচের সারণি ব্যবহার করে তালিকাটি তৈরি করল
ক্রম | পণ্য দ্রব্যের নাম | কোথায় তৈরি হয় |
---|---|---|
১ | বিস্কুট | কারখানা |
২ | ডিম | মুরগির খামার |
৩ | ||
৪ | ||
৫ |
তারপর প্রতিটি দল যার যার তালিকা উপস্থাপন করল।
চলো আমরাও উপরের সারনির মত সারণি তৈরি করে আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত পণ্য দ্রব্য ও সেগুলো কোথায় তৈরি হয়ে তার একটি তালিকা তৈরি করি। |
---|
উপস্থাপনা শেষে খুশি আপা বললেন, দেখেছো আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য অনেক পণ্য বা দ্রব্যই কারখানায় তৈরি হয়। তোমরা কি কখনো কোনো কারখানার ভেতরে গিয়ে কীভাবে সেখানে পণ্য বা দ্রব্য তৈরি হয় তা দেখেছ? কেমন হয় যদি আমরা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে আমাদের কাছাকাছি কোনো একটি কারখানা পরিদর্শন করি?
সবাই সমস্বরে উল্লসিত ধরে বলল-খুবই ভালো হয়!!
খুশি আপা তখন বললেন, ঠিক আছে তাহলে আগামী ক্লাসে প্রস্তুত হয়ে এসো, আমরা কারখানা পরিদর্শনে যাব। এরপর প্রস্তুতির জন্য খুশি আপা সবাইকে নিচে উল্লিখিত নির্দেশিকা অনুসারে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিলেন।
১. সবার বাবা-মা বা অভিভাবকের স্বাক্ষর গ্রহণের জন্য একটি অনুমতি পত্র
২. কী কী করণীয় তার তালিকা
৩. নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা
আজ ক্লাসে খুশি আপা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত আছেন। অভিভাবকদের মধ্যে যাদের আজ তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই, তারাও এসেছেন। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুতি চলছিল আজকের এই দিনটি সফল করার জন্য। এত আয়োজনের মূল কারণ হচ্ছে, আজ ষষ্ঠ শ্রেণির সবাই কারখানা পরিদর্শনে যাবে। যদিও সবার ইচ্ছা ছিল বড় কোনো একটা আইসক্রিম কারখানা পরিদর্শনে যাবার কিন্তু স্কুলের আশপাশে কোনো আইসক্রিম কারখানা নেই। যাতায়াতের খরচ, সময়, দূরত্ব, নিরাপত্তা এসব দিক বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলের পাশেই যে ইটভাটা আছে, সেখানেই তারা পরিদর্শনে যাবে।
খুশি আপা এক সপ্তাহ আগেই ক্লাসে এসে সবার সঙ্গে আলাপ করে যার যার এলাকা অনুযায়ী দলে ভাগ হতে সাহায্য করেছেন। আপার সহযোগিতায় সবাই যার যার এলাকা অনুযায়ী দলে বিভক্ত হয়েছে। তাঁর সহযোগিতায় তারা ছোট একটা কারখানা পরিদর্শনের প্রস্তুতি দল তৈরি করেছে। এ ছাড়াও খুশি আপা প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকটি বিষয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে তাঁদেরও সঙ্গে নিয়েছেন। এদিকে অনেক অভিভাবক যখন বলা হয়েছে, তখন তারাও সঙ্গী হতে চেয়েছেন।
নির্দিষ্ট সময়ে সবাই ইটের ভাটায় পৌঁছে গেল। ইটভাটা নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য ওরা আগে থেকেই এ বিষয়ে
১. অনুসন্ধানের প্রশ্ন
২. অনুসন্ধানের পরিকল্পনা
৩. তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা
৪. তথ্য সংগ্রহের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রশ্নমালা ইত্যাদি তৈরি করে রেখেছিল। এ কাজে তারা "বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে চারপাশ দেখি অধ্যায়ের সহযোগিতা নিয়েছিল।
অনুসন্ধানের প্রশ্ন:
আমাদের চারপাশে যে সকল জিনিস দেখি সেগুলো কোথায় ও কীভাবে তৈরি করা হয় এবং পরিবেশের সঙ্গে এগুলোর সম্পর্ক কেমন?
তথ্য সংগ্রহ (পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষাৎকার):
কারখানায় কীভাবে বিভিন্ন জিনিস তৈরি বা উৎপাদন করা হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তারা নিচের তৈরি ছক ব্যবহার করেছিল।
ক্রম | পর্যবেক্ষণের বিষয় | প্রাপ্ত তথ্য |
---|---|---|
১ | কারখানায় কীভাবে উৎপাদন হয়? | |
২ | কারখানায় যে মানুষেরা কাজ করে, তাদের পরিচয় বা কী কাজ করে, তার বিবরণ? | |
৩ | কারখানার জমি, ভবন/ ছাউনি/যন্ত্রপাতি প্রভৃতির মালিক কে? | |
৪ | মালিকের কাজ কী? | |
৫ | যারা কাজ করেন বা শ্রমিক, তাদের সঙ্গে ভবন/ছাউনি/ যন্ত্রপাতির কী সম্পর্ক? | |
৬ | মালিক কারখানা থেকে কী পান? | |
৭ | শ্রমিক কারখানা থেকে কি পায়? | |
৮ | কারাখানার সঙ্গে যে সকল মানুষ নানাভাবে যুক্ত, তাদের পরস্পরের সম্পর্ক ? | |
৯ | কারখানায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও জ্বালানি হিসেবে কি ব্যবহার করা হয়? | |
১০ | কাঁচামাল ও জ্বালানি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়? | |
১১ | কাঁচামাল ও জ্বালানি ব্যবহার করে কারখানায় কী কী তৈরি বা উৎপাদিত হয়? | |
১২ | উৎপাদিত সব দ্রব্যই কি মানুষের কাজে লাগে? | |
১৩ | উৎপাদিত দ্রব্য ও পণ্য কোথায় যায়? | |
১৪ | কারখানাটির সঙ্গে আশপাশের মানুষ, পশুপাখি বা পরিবেশের সম্পর্ক কী ধরণের ? | |
১৫ | কারাখানাটি কি আশপাশের পরিবেশকে মানুষ ও পশু-পাখির জন্য আরও বাসযোগ্য করে তুলছে না সমস্যা তৈরি করছে? | |
১৬ | ||
১৭ | ||
১৮ | ||
১৯ |
এই সারণি ব্যবহার করে যে তথ্য পাওয়া গেল তা সবাই বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে উপস্থাপন করল।
চলো আমরাও উপরের ছক ব্যবহার করে কোনো একটি কারখানা পরিদর্শন করে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। |
---|
এরপর খুশি আপা তাদের বললেন, আচ্ছা বর্তমান সময়ে মানুষ কীভাবে উৎপাদন করে তা তো আমরা দেখলাম। অতীতেও মানুষ কি একইভাবে উৎপাদন করত? অতীতের সব সময়ই কি একইভাবে উৎপাদন করত?
এ প্রশ্ন শুনে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল, কিন্তু কেউই কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। সবাই নিশ্চুপ হয়ে থাকল।
তখন নন্দিনী বলল, মনে হয় আমরা আসলে কেউই এ বিষয়ে কিছু জানি না। কিন্তু বিষয়টা খুবই মজার হবে বলে মনে হচ্ছে। আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এসেছে। আমরা যদি এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রকল্প করতে। পারি, তাহলে কেমন হয়?
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, খুব মজা হবে।
খুশি আপা বললেন, খুব ভালো লাগল তোমাদের কথা শুনে। তোমরা এখন নিজে থেকেই বিভিন্ন বিষয় শেখার চেষ্টা করছ। ঠিক আছে চলো আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধানী কার্যক্রম পরিচালনা করি। তাহলে চলো দলে বিভক্ত হয়ে আমরা অতীতে উৎপাদন কীভাবে হতো বা এক কথায় উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে কী জানতে চাই সে বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রশ্ন তৈরি করি।
তখন সবাই দলে বিভক্ত হয়ে নিচের মতো করে অতীতের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য অনুসন্ধানের প্রশ্ন তৈরি করল।
অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্নঃ
অতীতে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে উৎপাদন বা খাবার/দ্রবা/পণ্য তৈরি করা হতো এবং ঐ সময়ের মানুষ কীভাবে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল?
এরপর সব কয়টি দল অনুসন্ধানের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তথ্য সংগ্রহের উপযোগী প্রশ্নমালা তৈরি করে উপস্থাপন করল। সবকটি দলের প্রশ্নের উত্তর থেকে তারা আলোচনার ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নমালা তৈরি করল।
ক্রম | পর্যবেক্ষণের বিষয় | প্রাপ্ত তথ্য |
---|---|---|
১ | কোথায় উৎপাদন বা খাবার/বিভিন্ন দ্রব্য পণ্য তৈরি হয় | |
২ | উৎপাদনে বা খাবার/বিভিন্ন দ্রব্য পণ্য তৈরি করতে কী ধরনের যন্ত্র/ মেশিন/হাতিয়ার/অস্ত্র/জিনিস ব্যবহার করা হতো? | |
৩ | কীভাবে উৎপাদন হয়? | |
৪ | উৎপাদনে যে মানুষেরা কাজ করে তাদের পরিচয় বা কী কাজ করে তার বিবরণ? | |
৫ | যেখানে উৎপাদন হয় সে জমি, ভবন/ঘর/ছাউনি/যন্ত্রপাতি | প্রভৃতির মালিক কে? | |
৬ | মালিকের কাজ কী? | |
৭ | যারা কাজ করে বা শ্রমিক তাদের সঙ্গে ভবন/ঘর /ছাউনি/ যন্ত্রপাতির কী সম্পর্ক? | |
৮ | মালিক উৎপাদন থেকে কী পান? | |
৯ | শ্রমিক উৎপাদন থেকে কী পায়? | |
১০ | উৎপাদনের সঙ্গে যে সকল মানুষ যুক্ত তাদের পরস্পরের সম্পর্ক কী? | |
১১ | উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়? | |
১২ | কাঁচামাল ও জ্বালানি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়? | |
১৩ | কাঁচামাল ও জ্বালানি ব্যবহার করে কী কী দ্রব্য বা পণ্য তৈরি বা উৎপাদিত হয়? | |
১৪ | উৎপাদিত সব দুবাই কি মানুষের কাজে লাগে? | |
১৫ | উৎপাদিত দ্রব্য ও পণ্য কোথায় যায়? | |
১৬ | যেখানে উৎপাদন হয় তার সঙ্গে আশপাশের মানুষ, পশুপাখি বা পরিবেশের সম্পর্ক কী ধরণের ? | |
১৭ | যেভাবে উৎপাদন হয় বা উৎপাদন পদ্ধতি কি আশপাশের পরিবেশকে মানুষ ও পশু-পাখির জন্য আরও বাসযোগ্য করে তুলছে না সমস্যা তৈরি করছে? |
চলো আমরাও ওদের মতো উপরের সারণিতে উল্লিখিত প্রশ্ন তৈরি করি এবং অতীতের উৎপাদন পদ্ধতি | | সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রকল্প তৈরি করি। |
---|
প্রশ্নমালা তৈরি করার পর আনাই মোগিনী বলল, কিন্তু আমরা তো অতীতে ফিরে যেতে পারব না, তাহলে অতীতের মানুষের জীবন নিয়ে কীভাবে গবেষণা করব?
শুনে খুশি আপা বললেন, অতীতে মানুষ যা করেছে তা ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি। আমাদের যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বই আছে সেখানে মানুষের অতীতের কাজের অনেক বিবরণ আমরা খুঁজে পাই। আমরা এই বইসহ অন্যান্য বই, পত্রিকা বা ইন্টারনেটসহ যেকোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য ব্যবহার করতে পারব।
এরপর দলগতভাবে ওরা নিচে উল্লিখিত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ্য বইয়ের অধ্যায়গুলো ব্যবহার করে অতীতের বিভিন্ন সময়ে মানুষ কীভাবে উৎপাদন করত সে বিষয়ে অনুসন্ধান করল। প্রতিটি অধ্যায়ের বিষয় নিয়ে ওরা আলাদা আলাদা অনুসন্ধান করল। এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ও ভৌগোলিক অবস্থানের উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওরা জানতে পারল।
১. মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে;
২. সভ্যতার বিকাশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে নগরায়ন ও রাষ্ট্র। নগর সভ্যতার বিকাশ-এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ:
৩. নগর সভ্যতার উত্থান পতন-দক্ষিণ এশিয়া;
৪. সাম্রাজ্যের বিস্তার, নগর-রাষ্ট্র, আর বৈচিত্রা
৫. আঞ্চলিক পরিচয়, চাষাবাদের বিস্তার এবং তৃতীয় নগরায়ণ : যোগাযোগ, মিশ্রণ আর প্রতিযোগিতার
এ কাজে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ্য বইয়ের অধ্যায়গুলোর সঙ্গে ওরা অন্যান্য বই এবং ইন্টারনেটে ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেছে। ইন্টারনেট থেকে কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় সেটা ওরা আগেই ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয় থেকে শিখে নিয়েছিল।
চলো আমরাও এদের মতো ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), অন্যান্য বই ও ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে অতীতের মানুষ কীভাবে উৎপাদন করত তা অনুসন্ধান করি। |
---|
অনুসন্ধান শেষে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিটি দল একটি করে রিপোর্ট তৈরি করল। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময়ের ও ভৌগোলিক স্থানের উৎপাদনে ব্যবহৃত হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতির মডেল তৈরি করল।
এ কাজে তারা মাটি, কাগজ, শক্ত বোর্ড, কাঠ বা বাঁশ ইত্যাদি নানা ধরনের মাধ্যম বা জিনিস ব্যবহার করল। এসব মডেল ব্যবহার করে রিপোর্টে উল্লিখিত অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভূমিকা অভিনয়ের মাধ্যমে। অতীতের উৎপাদন পদ্ধতিগুলো উপস্থাপন করল।
চলো ওদের মতো আমরাও অতীতের উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে রিপোর্ট। | তৈরি করি এবং হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতির মডেল তৈরি করে ভূমিকা অভিনয় করি। |
---|
আরও দেখুন...